রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

মুখ থুবড়ে পড়েছে খুলনা-কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস 

 

খুলনা অফিস : ঢাকা-খুলনা-কলকাতা রুটে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী বাস চলাচলের পাঁচ মাস অতিবাহিত না হতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ রুটের যাত্রীবাহী বাস গ্রীণলাইন পরিবহন চলাচল প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। আর শ্যামলী পরিবহন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একই সাথে আন্তর্জাতিক রুটের এ বাস সার্ভিসের পৃথক কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না যাত্রীরা। পেট্রাপোল ও বেনাপোল সীমান্তে নেই কাস্টমস ইমিগ্রেশনের আলাদা কোন ব্যবস্থা। সাধারণ যাত্রীদের সাথে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েই এ কাজ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আর বেনাপোলে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন হওয়া সত্ত্বেও খুলনায় আসার পথে আমড়াখালী চেকপোস্টে দীর্ঘ সময় ধরে বিজিবি চেকিংয়ের নামে চলছে হয়রানী। দফায় দফায় চেকিংয়ের কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অধিক সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে যাত্রীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের।

গ্রীন লাইন পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মো. খায়ের বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ঢাকা-মাওয়া-খুলনা-কলকাতা রুটে তাদের যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। মাওয়া ফেরিঘাটে অতিরিক্ত সময় ব্যয়সহ নানা কারণে কর্তৃপক্ষ এ রুটে আপাতত গ্রীণলাইন চলাচল বন্ধ রেখেছে। তবে ঢাকা-যশোর হয়ে বেনাপোল-কলকাতা রুটে গ্রীণলাইন চলাচল করছে বলে তিনি জানিয়েছেন। আর খুলনা-কলকাতা রুটে শ্যামলী সৌহার্দ্য পরিবহন চলাচল করছে।  

শ্যামলী পরিবহনের খুলনা বিভাগীয় ইনচার্জ শেখ ইফতেখার হোসেন জানান, ঢাকা-মাওয়া-খুলনা-কলকাতা রুটে নয়, যাত্রীদের চাহিদার ভিত্তিতে শুধুমাত্র খুলনা-কলকাতা রুটে শ্যামলী পরিবহন চলাচল করছে। খুলনা থেকে প্রতি শনিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে কলকাতা ছেড়ে যায়। অন্যদিকে, শুক্রবার, সোমবার ও বুধবার কলকাতা থেকে খুলনায় আসে। এ রুটে পরিবহন ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি নেই। তবে বিভিন্ন স্থানে হয়রানী করা হয় বলে তাদের কাছে যাত্রীরা অভিযোগ করেছে।  

এদিকে এ রুটের যাত্রীদের অভিযোগ, বাস সার্ভিসে সন্তুষ্ট থাকলেও চেকিংয়ের নামে দফায় দফায় তাদের হয়রানী হতে হচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিসের সুবিধার কথা বলা হলেও বেনাপোলে কাস্টমস-ইমিগ্রেশনে নেই কোন পৃথক ব্যবস্থা। ফলে অন্যসব যাত্রীদের মতোই বেনাপোলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাস্টমস ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। খুলনা থেকে কলকাতা যাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন একটা সমস্যা না থাকলেও আসার পথে রয়েছে পদে পদে হয়রানী। কলকাতা নিউ মার্কেট থেকে আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল সল্টলেকে এসে যাত্রীদের ব্যাগ-লাগেজ তল্লাশী করা হয়। এরপর বাস পেট্রাপোলে এলে সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। আবার বেনাপোলে এসে সাধারণ যাত্রীদের সাথেই কাস্টমস ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। এতে প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা সময় বেশি লেগে যায়। বেনাপোলে কাস্টমস ইমিগ্রেশন শেষ করে কিছু দূর যেতে না যেতেই আমড়াখালী বিজিবির চেকপোস্ট। যেখানে অন্য বাসের ন্যায় সৌহার্দ্য পরিবহনের যাত্রীদের ব্যাগও চেক করা হয়। এখানে দীর্ঘ সময়ের চেকিংয়ে আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যায়। এখানেই বেশি নাজেহাল হতে হয় বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। ফলে ৬ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে প্রায় ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা। সেই পূর্বের ভোগান্তিতো লেগেই আছে। তাহলে কি সুবিধা দেয়া হয়েছে, এমটাই প্রশ্ন যাত্রীদের। তারা এ ধরনের হয়রানী দূর করণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।  

শ্যামলী সৌহার্দ্য পরিবহনের যাত্রী খায়রুল হায়দার জুয়েল বলেন, আমি গত ১৭ নবেম্বর কলকাতা থেকে খুলনা এসেছি। সকালে বাসে চড়ে পেট্রাপোল এবং বেনাপোলে চেকিং কাস্টমস ইমিগ্রেশন করা হয়। আন্তর্জাতিক মানের বাস সার্ভিসের কথা বলা হলেও এখানে সৌহার্দ্যরে যাত্রীদের জন্য নেই আলাদা কোন কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা। ফলে যাত্রীদের ভারী লাগেজ-ব্যাগ নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাহলে স্পেশাল সুবিধা কোথায়? সেখান থেকে বেরিয়ে খুলনায় আসার পথেই আমড়াখালী চেকপোস্টে বিজিবি অন্য বাসের যাত্রীদের মতোই সৌহার্দ্যরে যাত্রীদের হয়রানী করে। তিনি বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বেনাপোল ও পেট্রাপোলে কাস্টমস চেকিং করিয়ে লাভ কি? সেখানেতো কাস্টমস ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবকিছুই চেক করে দেখেন। তাহলে আবার এই হয়রানীর মানে কি? যদি সন্দেহ হয় তাহলে দীর্ঘ সময় নিয়ে লাগেজ ওলোট-পালট করে চেকিং করেন। এমন হয়রানির কোন মানে হয় না।

গত সোমবার রাতে খুলনায় আসা শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার মনোজ কুমার ইয়াদব বলেন, ভারতীয় সময় সকাল ৯টায় সল্টলেক করুণীময়ী আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল থেকে বাস রওনা হয়ে সীমান্তে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে কাস্টমস-ইমিগ্রেশনে। ইমিগ্রেশনে আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই। যাত্রী ছিল মাত্র ১১ জন। ফলে অন্যান্য দিনের চেয়ে সময় কিছুটা কম লেগেছে। এরপর আমড়াখালীতে এসে বিজিবি চেকিং করা হয়। সেখানে খুলনায় পৌনে ৭টায় প্রবেশ করেছি। অন্যান্য দিন আরো বেশি সময় লাগে বলে তিনি জানিয়েছেন। 

শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবনী কুমার ঘোষ কলকাতা থেকে মুঠোফোনে বলেন, খুলনা-কলকাতা আন্তর্জাতিক প্রটোকলের গাড়ি। এ রুটে প্রথম দিকে পুলিশ প্রটেকশন দিয়ে বাস চলাচল করেছে। এতে ভিআইপি এবং অসুস্থ যাত্রীরাই চলাচল করে থাকে। বেনাপোল থেকে আমড়াখালী কত দূর? বেনাপোল ও পেট্রাপোলে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন থাকা সত্ত্বেও কেন আমড়াখালীতে বিজিবি চেকিং পোস্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চেকিং করা হয়। এটি আমাদের বোধগম্য নয়। দেশের নাগরিকদের এতো হয়রানী কেন করা হয়? এতে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষ ক্ষেত্রে চেকিং হতে পারে এটি ঠিক আছে, তাই বলে কি দিনের পর দিন এমনটা হবে। এ বিষয়ে বিআরটিসিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে এ রুটে যাত্রীদের দুর্ভোগ থেকেই যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ রুটে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে প্রয়োজনে টয়লেটসহ বাসের ব্যবস্থা করার জন্যও আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেটি দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে রাস্তার যে বেহাল দশা। এটিও একটি বড় সমস্যা। এসব সমস্যার ফলে ৬ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ